এমভি অভিযান ১০-এ স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪১ যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় লঞ্চমালিক মো. হামজালাল শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ থেকে তার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। প্রায় ৪০০ যাত্রী নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমভি অভিযান-১০ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। চাঁদপুর ও বরিশাল টার্মিনালে লঞ্চটি থামে এবং যাত্রী ওঠানামা করেন। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছলে রাত ৩টার দিকে এতে আগুন ধরে যায়।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ৮০ জনেরও বেশি যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় অনেক যাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে বেঁচে গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক।
এ ঘটনায় লঞ্চমালিক হামজালাল শেখের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
রোববার সকালে বরগুনা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন বরগুনা বারের সদস্য আইনজীবী ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজমুল ইসলাম।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাহবুব আলম মামলাটি গ্রহণ করে বরগুনা থানার ওসিকে এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। লঞ্চের মালিকের ঠিকানা দেখানো হয়েছে সূত্রাপুর, ঢাকা।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার ঘটনার দিন লঞ্চটিতে আগুন লাগার পর ভাসতে ভাসতে ঝালকাঠি জেলার কলাবাগান এলাকার কিনারায় পৌঁছায়। ফায়ার সার্ভিস ও ঝালকাঠি প্রশাসনের লোকজন আসিয়া কতিপয় যাত্রীদের দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ঝালকাঠি জেনারেল হাসপাতালে এবং বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। প্রায় অর্ধশতাধিক মৃতদেহ উদ্ধারের পর শনাক্তকৃত কিছু লাশ স্বজনদের নিকট বুঝিয়ে দেন বাকি লাশ বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবরে হস্তান্তর করেন।
ঘটনার সময় হতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আসামি স্বয়ং অথবা তার কোনো প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে স্বজন হারানো অভিভাবকদের সান্ত্বনা পর্যন্ত প্রদান করেননি। আসামিপক্ষ বেপরোয়াভাবে লঞ্চ চালায়, ভাড়ার জন্য নিরাপত্তাহীন, অতিরিক্ত বোঝাইকৃত লঞ্চ জলপথে লোক বহন করে, অগ্নি বা দাহ্য বস্তু সম্পর্কে ত্রুটি রেখে, বিস্ফোরক পদার্থ ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ত্রুটি রেখে অবহেলা এবং বেপরোয়া যান চালানোর মাধ্যমে শত শত যাত্রীর মৃত্যু ঘটানোর অপরাধ করেছেন। এ মৃত্যুর জন্য লঞ্চমালিক নিজে দায়ী।
মামলার বাদী যুগান্তরকে বলেন, মালিক যদি লঞ্চের ইঞ্জিন ত্রুটি সেরে এবং আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি রাখতেন; তা হলে এত মানুষের মৃত্যু আহত ও যানমালের ক্ষতি হতো না। লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রী বরগুনার। এ কারণে আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনস্বার্থে মামলা করেছি।
মামলার আইনজীবী সাইফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কোর্টে যখন মামলা করি তখন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন লঞ্চচালকরা দ্রুত যে কোনো কিনারে ভিড়াতে পারতেন। যদি লঞ্চ কিনারে ভেড়াত, তা হলে এত লোকের প্রাণহানি হতো না। আদালতে আদেশে বরগুনাবাসী খুশি হয়েছেন।